ত্রিপুরা ও আগরতলার দর্শনীয় স্থান ও বেড়ানোর জায়গা

প্রিয় ভ্রমণ পিয়াসু বন্ধুরা আপনারা যারা বাংলাদেশ ও অন্যান্য যায়গা থেকে ত্রিপুরা ও আগরতলার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যেতে চান তাদের জন্য আজকে আমি নিয়ে আসলাম ত্রিপুরা ও আগরতলার দর্শনীয় স্থান ও বেড়ানোর জায়গা ও সেই যায়গা গুলোতে কীভাবে যাবেন ও কি কি দেখার আছে তার বিস্তারিত বর্ণনা এই পোস্ট এ করা হল।  আশা করি আমার এই পোস্ট আপনার জন্য কিছুটা হলেও উপকারে দিবে।


নীরমহল , ত্রিপুরা 

নীরমহল , ত্রিপুরা

নীরমহল , ত্রিপুরা




নীর অর্থাৎ জলের মাঝে মহলটি স্থাপিত বলে এর নামকরণ করা হয় নীরমহল। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক বাহাদুরের আমলে নীরমহল তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, ভারতেরই আরেক প্রদেশ রাজস্থানের উদয়পুরে ঠিক একই রকম একটি প্রাসাদ রয়েছে। ইংল্যান্ডের মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোম্পানি ১৯৩০ সালে এর কাজ শুরু করে এবং ১৯৩৮ সালে ভবনটির উদ্বোধন করা হয়।
ত্রিপুরার একটি ছোট এলাকা মেলাঘরে নীরমহল অবস্থিত। রাজধানী আগরতলা থেকে এর দূরত্ব ৫৩ কিলোমিটার।

নীরমহল বাজারের পাশে রুদ্রসাগর নামে বিশাল একটি জলাশয় আছে। এর আয়তন প্রায় পাঁচ দশমিক তিন বর্গকিলোমিটার। রুদ্রসাগরের ঠিক মাঝখানে ত্রিপুরার রাজার গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন অবকাশ যাপনের জন্য এই মহলটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটি একাধারে যেমন রাজার সৌন্দর্যপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়, তেমনি হিন্দু ও মোঘল সংস্কৃতি মিশিয়ে তিনি একটি দর্শনীয় কিছু করতে চেয়েছিলেন, সেই ধারণারও প্রমাণ পাওয়া যায়।

নীরমহল , ত্রিপুরা

নীরমহল , ত্রিপুরা




প্রাসাদের দুটি অংশ। মূল অংশ রয়েছে পশ্চিম পাশে এবং পূর্ব পাশে রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য দুর্গ। মূল অংশকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- বাইরের কক্ষ এবং অন্দরমহল। বাইরের কক্ষগুলোর মধ্যে বিশ্রামঘর, খাজাঞ্চিখানা ও নাচঘর উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের পাঁচটি কক্ষ সেখানে রয়েছে। এছাড়া দাবা খেলার জন্যও একটি আলাদা কক্ষ রয়েছে। রাণী ও অন্যদের জন্য অন্দরমহলে রয়েছে বিশাল ছয়টি কক্ষ। এছাড়া রান্না ঘর, রাজার সভাঘর, আড্ডাঘর ইত্যাদি তো রয়েছেই। বর্তমানে মহলের ভিতর একটি জাদুঘরও রয়েছে।


অন্দরমহলটি এমনভাবে সাজানো ছিলো যাতে রাজা-রাণী নৌকাভ্রমণ সেরে অন্দরমহলের সিঁড়িতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া প্রাসাদের ভেতরের অংশে একটি বিরাট বাগানও রয়েছে। রাজা-রাণীর বেড়ানোর জন্য ঘাটে সবসময় মোটরচালিত নৌকা থাকত।

বাইরের দিকে দুটি ঘাট রয়েছে। সেখানে কর্মচারীরা গোসল করতো এবং ঘাটগুলো তাদের যাতায়াতের জন্যও ব্যবহার করা হতো।

তবে মহারাজা অনেক অর্থ খরচ করে এই প্রাসাদ নির্মাণ করলেও খুব বেশি দিন তিনি ভোগ করতে পারেননি। মাত্র সাত বছর তিনি এই প্রাসাদ ব্যবহার করেছে। কারণ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।


মহারাজা মারা যাওয়ার পর বহুদিন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। এ সময় আস্তে আস্তে এটি ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে। অবশেষে ১৯৭৮ সালে ত্রিপুরার তথ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এর দায়িত্ব নেয় এবং ভবনটি রক্ষায় সচেষ্ট হয়। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ভবনটিতে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়। বর্তমানে এটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতি শীতের সময়ে লাইট অ্যান্ড লেজার শোর মাধ্যমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এই প্রাসাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে রুদ্রসাগর লেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

 উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ , আগরতলা ত্রিপুরা 


আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় আধা মাইল এলাকাজুড়ে দ্বিতল এই প্রাসাদটি অবস্থিত। মিশ্র স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত প্রাসাদটির তিনটি গম্বুজ ঘিরে রয়েছে মুঘল আমলের খাঁজকাটা নকশা যার মাঝেরটি ৮৬ ফুট উঁচু। ১৮৯৯ সালে এই সুদৃশ্য ও মনোরম প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯০১ সালে। ওই সময়ই এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ১০ লাখ ভারতীয় রূপি। মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা। 


 
উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ , আগরতলা ত্রিপুরা

 উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ , আগরতলা ত্রিপুরা


প্রধান ভবনটির দু’পাশে দুটি দীঘি। দীঘির পাড়ে সেগুন, শিরিষ, কড়ই আর শাল গাছের সাজানো অরণ্য। প্রাসাদের প্রবেশ পথের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ফোয়ারা আর ভাস্কর্যসমৃদ্ধ একটি চমৎকার বাগান। প্রাসাদের ভেতরে সারি সারি কক্ষ। এগুলোর প্রতিটির রয়েছে আলাদা আলাদা নাম- শ্বেতমহল, লালমহল, সদর বাড়ি, তহবিল খানা, আরাম ঘর, পান্থশালা প্রভৃতি। এই প্রাসাদের নামকরণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভবনটিতে এখন ত্রিপুরা রাজ্য বিধানসভার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিছু সরকারি অফিসও আছে সেখানে।




জাম্পুই হিলস , ত্রিপুরা 



অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শীতল আবহাওয়ার জন্য জাম্পুই হিলস হয়ে উঠেছে ত্রিপুরা রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। আগরতলা থেকে প্রায় ২১৮ কিলোমিটার দূরে এলাকাটির অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এর উত্তর পাশে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ এবং দক্ষিণ পাশে চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। জাম্পুই রেঞ্জ পড়েছে দুই প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরা ও মিজোরামের মাঝখানে। 


 
জাম্পুই হিলস , ত্রিপুরা

জাম্পুই হিলস , ত্রিপুরা



জাম্পুই হিলসের স্থানীয় অধিবাসীরা হলো ত্রিপুরার আদিবাসী রিয়াং ও সিকাম সম্প্রদায়। সিকামরা আবার আবাস গেড়েছে দশটি গ্রামে যেগুলোর নাম হলো ফুলডাং সাই, চাবওয়াল, থিয়াং সাং, বাংলা বান, বেহাং চিপ, ভাংমুন, লক্ষ্মী, মুনপুই, মুং হুয়াং ও ভাই সুম। এসব গ্রাম পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত। পরিপাটি ও অতিথি পরায়ণ মিজোরা রাজ্যের অন্যান্য আদিবাসীদের চেয়ে শিক্ষিত এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। জাম্পুই হিলস এলাকায় উন্নতমানের কমলা উৎপন্ন হয়। চমৎকার স্বাদ ও রসের কারণে বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এখানকার মিজোদের বিখ্যাত বাঁশনৃত্য এক নিমেষে আপনার কর্মব্যস্ত জীবনের সব একঘেয়েমি দূর করে মনকে করে তুলবে সতেজ ও প্রাণচঞ্চল। জাম্পুই হিলসের বেল্টিং সিব হলো সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যের উচ্চতম স্থান। এখানে দাঁড়িয়ে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে কখন যে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবেন টেরই পাবেন না। এখানে একটি শিবমন্দির দেখতে পাবেন যা ১৪০০ বছর আগে নির্মাণ করেছিলেন ত্রিপুরা রাজারা। ত্রিপুরাবাসীর কাছে এটি একটি পবিত্র স্থান।



No comments:

Post a Comment