দার্জিলিং ভ্রমণ এবং দার্জিলিং এর দর্শনীয় স্থান পশ্চিমবঙ্গ

দার্জিলিং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্হিত।দার্জিলিং নিম্ন হিমালয়ের মহাভারত শৈলশ্রেণীতে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থাধীনে থাকলেও দার্জিলিং জেলার প্রধান শহর দার্জিলিংয়ের স্থানীয় প্রশাসনে আংশিক স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা রয়েছে।কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুপম সৌন্দর্য এবং টাইগার হিলের চিত্তাকর্ষক সূর্যোদয়ের জন্য দার্জিলিং বিখ্যাত।

যেভাবে যাবেন :-

ঢাকা থেকে বুড়িমারী/ফুলবাড়ী পোর্ট দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যেতে পারেন।বুড়িমারী পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি ৮২.৯ কিমি।আর ফুলবাড়ী পোর্ট থেকে শিলিগুড়ি ১২ কিমি।আবার কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি হয়েও দার্জিলিং যেতে পারেন।কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫৫৮.৭ কিমি।কলকাতা থেকে বাস/ট্রেনে শিলিগুড়ি যেতে পারেন।শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং ৬৩ কিমি।

দার্জিলিং এ যা যা দেখবেন :-

১)টাইগার হিল
২)রক গার্ডেন
৩)বাতাসিয়া লুপ
৪)ঘুম মনেস্ট্রি
৫)ঘুম স্টেশন
৬)তেনজিং রক
৭)নাইদু জু
৮)হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট
৯)দার্জিলিং এর চা বাগান
১০)কেবল কার রাইড
১১)মল রোড

টাইগার হিল :-

টাইগার হিল (২,৫৯০ মিটার) পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত।টাইগার হিল ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের উচ্চতম স্টেশন ঘুম শহরের সর্বোচ্চ বিন্দু। এখান থেকে মাউন্ট এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত-এর বিস্তারিত দৃশ্যপট দেখা যায়।
টাইগার হিল দার্জিলিং
টাইগার হিলে সূর্যোদয়


টাইগার হিল দার্জিলিং শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দার্জিলিং থেকে এখানে জিপে করেও যাওয়া যায়। আবার চৌরাস্তা, আলুবাড়ি বা জোড়বাংলা হয়ে পায়ে হেঁটে গিয়ে, তারপর পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠেও পৌঁছানো যায়।

সূর্যোদয়ের সময় নিচু উচ্চতায় সূর্যকে দেখতে পাওয়ার আগেই কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরগুলি আলোকিত হয়ে ওঠে। পৃথিবীপৃষ্ঠের বক্রতার জন্য টাইগার হিল থেকে মাকালু পর্বতকে (৮৪৮১ মিটার) মাউন্ট এভারেস্টের (৮৮৪৮ মিটার) থেকে উঁচু মনে হয়। টাইগার হিল থেকে সরলরেখায় মাউন্ট এভারেস্টের দূরত্ব ১৭২ কিমি।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে দক্ষিণে কার্শিয়াং শহর এবং কিছু দূরে দক্ষিণেই তিস্তা নদী, মহানন্দা নদ, বালাসোন নদ ও মেচি নদীকে সর্পিল পথে এঁকে বেঁকে চলতে দেখা যায়।চোলা পর্বতমালার পিছনে অবস্থিত তিব্বতের চুমল রি পর্বতটিকেও টাইগার হিল থেকে দেখা যায়। এই পর্বতটি টাইগার হিল থেকে ১৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত।সেঞ্চল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য টাইগার হিলের কাছে অবস্থিত।

ঘুম স্টেশন :-

দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি পথ বেয়ে এই রেল লাইন শিলিগুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ট্রেন পরিচালনা করে যে সংস্থা তার নাম দার্জিলিং হিমালয়ান রেল কর্তৃপক্ষ। ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালে এই পথ নির্মাণ করা হয়েছিলো। এর দৈর্ঘ্য ৮৬ কিলোমিটার। পথের উচ্চতা শিলিগুড়িতে ৩২৮ ফুট। আর দার্জিলিংয়ে ৭৪০৫ ফুট। ভারতের সর্বোচ্চ রেলপথ এটি। দ্বিতীয় স্থানে আছে শিমলা। এখানে দু ধরনের ট্রেন চলে। একটি বাষ্পচালিত। আরেকটা ডিজেল চালিত।
ঘুম মনেস্ট্রি দার্জিলিং
ঘুম মনেস্ট্রি দার্জিলিং

ফ্রাঙ্কলিন প্রিস্টেজ নামে এক লোক শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিংয়ের মধ্যে বাষ্পচালিত ট্রেন লাইনের প্রস্তাব করেন। ব্রিটিশ আমলের কথা। তখন বাংলার গর্ভনর ছিলেন স্যার এ্যাশলে ইডেন। সম্ভবত তার নামেই ঢাকার ইডেন কলেজ। তিনি প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন। ১৮৭৮ সালে কোলকাতা- শিলিগুড়ি স্ট্যান্ডার্ড লাইনের মাধ্যমে এই দুটি শহর রেল সেবায় যুক্ত হয়েছিলো। ঠিক এর পরের বছরই ফ্রাঙ্কলিনের প্রস্তাবের পরপরই শিলিগুড়ি- দার্জিলিং ন্যারো গেজের কাজ শুরু হয়েছিলো। নির্মাণ কাজ করেছিলো গিলান্ডারস আরবার্থনট এ্যান্ড কোম্পানি। ১৮৮০ সালের ২৩ আগস্ট শিলিগুড়ি-কার্শিয়াং অংশ চালু হয়েছিলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দার্জিলিং ও ঘুমের একাধিক সেনা ক্যাম্পে রসদ সরবরাহ করা হয়েছিলো এই রেলপথ ব্যবহার করে।
১৯৮৮-৮৯ সালে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কারণে এই পথ ১৮ মাস বন্ধ ছিলো। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একমাত্র অস্ট্রিয়ার সেমারিং রেলওয়ে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়েছিলো। সেদিক থেকে দার্জিলিং বা ঘুম দ্বিতীয়।

বাতাসিয়া লুপ :-

এই লুপের বিশেষত্ব হলো এটি একটি পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত। অনেকটা মালভূমির মতো। উপর থেকে নিচে ক্রমশ সুষম ঢালু। এখান থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। অবশ্যই আকাশ পরিষ্কার থাকা সাপেক্ষে।
বাতাসিয়া লুপ দার্জিলিং
বাতাসিয়া লুপ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

মাঝখানের মিনার বা স্তম্ভকে ঘিরে রয়েছে শ্বেতপাথরে বাঁধানো চত্বর। বৃষ্টি থেকে রক্ষা কিংবা বিশ্রাম নেয়ার জন্য কিছু ছাউনিও রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পুরো চত্বরটি কাত হয়ে আছে।


বাতাসিয়া লুপ দার্জিলিং
বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং
 একদিকে হেলে পড়ে যেতে পারে।ট্রয় ট্রেনে ওঠার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর মধ্যে চেপে বাতাসিয়া লুপ পার হওয়া।
বাতাসিয়া লুপ এবং ঘুম রেল স্টেশন এখন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ।

তেনজিং রক :-

তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয় করেন ১৯৫৩ সালে।আর তেনজিং রক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। এটি একটি প্রাকৃতিক পাথরখণ্ড। জানা যায়, তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয়ের আগে এতে অনুশীলন করেন। পরের বছর পর্বতারোহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

জওহর লাল নেহেরু সেসময় দার্জিলিং ভ্রমণে এলে কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই এই পাথরখণ্ডে ওঠেন তেনজিং। দার্জিলিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হিমালয়ান মাউন্টেইনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম ডিরেক্টরও হন তানজিং নোরগে।এই রকটি এখনও পর্বতারোহী ও ভারতীয় সেনাদের মহড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।হিমালয় আরোহনের আগে এই ছোট্ট এই রকে আরোহন এখনও মানা হয় আশীর্বাদ হিসেবে।

দার্জিলিংয়ের ইতিহাস :-

দার্জিলিংয়ের ইতিহাস সিকিম,নেপাল,ভূটান ও ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত সিকিম রাজ্য দ্বারা দার্জিলিং সংলগ্ন পাহাড়ী অঞ্চল এবং নেপাল রাজ্য দ্বারা শিলিগুড়ি সংলগ্ন তরাই সমতল অঞ্চল শাসিত হত।১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে নেপালের গুর্খারা সমগ্র পাহাড়ী অঞ্চল অধিকারের চেষ্টা শুরু করলে সিকিম রাজ্যের ছোস-র্গ্যাল তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেপালীরা তিস্তা নদীর তীর পর্যন্ত সিকিম সেনাবাহিনীকে হঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই সময় সমগ্র উত্তর সীমান্তে নেপালীদের বিজয়যাত্রা রুখতে ব্রিটিশরা তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ইঙ্গ-গুর্খা যুদ্ধের ফলে গুর্খারা পরাজিত হয়ে পরের বছর সগৌলি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির ফলে সিক্কিম রাজ্য থেকে অধিকৃত মেচী নদী থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল নেপালীরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে তিতালিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চল ছোস-র্গ্যালকে ফিরিয়ে দিয়ে সিকিম রাজ্যের সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করে।
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে লেপচা ও হিন্দুস্থানী ভাষায় রচিত এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দার্জিলিং অঞ্চলের লীজ প্রদান করা হয়।

১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক প্রতিনিধিদল নেপাল-সিকিম অঞ্চলের সীমান্তে তাদের যাত্রাকালে দার্জিলিং অঞ্চলে অবস্থান করার সময় এই স্থানে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন।১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ছোস-র্গ্যালের নিকট হতে মহানন্দা নদীর পশ্চিমাঞ্চল লীজ নেন।১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে সিকিম রাজ্য আর্থার ক্যাম্পবেল নামক কোম্পানির একজন আধিকারিক এবং জোসেফ ডাল্টন হুকার নামক একজন উদ্ভিদবিদ ও অভিযাত্রীকে গ্রেপ্তার করলে কোম্পানি তাঁদের মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠায়, যার ফলে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোম্পানি ৬৪০ বর্গমাইল এলাকা অধিকার করে নেয়। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভূ্টান ও ব্রিটিশরা সিঞ্চুলা চুক্তি স্বাক্ষর করলে কালিম্পং ও পাহাড়ের গিরিপথগুলির ওপর ব্রিটিশ রাজের অধিকার হয়।ব্রিটিশ ও সিকিমের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিবাদের ফলে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিস্তা নদীর পূর্ব তীরের অঞ্চলগুলি ব্রিটিশদের হস্তগত হয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১,২৩৪ বর্গমাইল ক্ষেত্রফল এলাকা নিয়ে দার্জিলিং জেলা গঠিত হয়, যা বর্তমানে একই আকারের রয়ে গেছে।

গ্রীষ্মকালে সমতলভূমির প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ আধিকারিকেরা দার্জিলিংয়ের মনোরম আবহাওয়ায় বসবাস শুরু করলে দার্জিলিং একটি শৈলশহর ও স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।আর্থার ক্যাম্পবেল ও রবার্ট নেপিয়ার এই শৈলশহর গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টার ফলে ১৮৩৫ থেকে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পাহাড়ের ঢালে চাষাবাদ ও ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হলে দার্জিলিংয়ের জনসংখ্যা শতগুণ বৃদ্ধি পায়।১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমতলের সঙ্গে সংযোগকারী প্রথম সড়কপথ নির্মিত হয়।১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য অস্ত্রাগার নির্মিত হয় এবং ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এই শহরকে পুরসভায় পরিণত করা হয়।১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ শুরু হলে বেশ কিছু ব্রিটিশ চা প্রস্তুতকারক এই স্থানে বসবাস শুরু করেন।১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং শহরকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা করা হয়।স্কটিশ ধর্মপ্রচারকরা ব্রিটিশ আধিবাসীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেন। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং হিমালয়ান রেল চালু হলে শহরের উন্নয়ন আরো দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।

ব্রিটিশ শাসনকালের শুরুতে দার্জিলিংকে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত জেলা হিসেবে গণ্য করা হত, যার ফলে ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য জেলাতে প্রযোজ্য আইন এই অঞ্চলে বলবত হত না। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলকে একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দার্জিলিং অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সশস্ত্র বিপ্লবীরা বাংলার গভর্নর স্যার জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টাও করেন।১৯৪০-এর দশকে এই জেলার চা শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেন।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও তরাই অঞ্চলের কিয়দংশ নিয়ে নির্মিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পাহাড়ে নেপালীরা প্রধান জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করলেও তরাই সমতলে ভারত ভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিশাল সংখ্যক বাঙালি উদ্বাস্তুরা বসবাস শুরু করতে শুরু করে। নেপালীদের দাবীগুলির প্রত্যুত্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিস্পৃহ মনোভাবে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দার্জিলিংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও নেপালী ভাষার স্বীকৃতির দাবী ওঠে।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে সিকিম নামক একটি নতুন রাজ্যের উদ্ভব হলে এবং ভারত সরকার দ্বারা নেপালী ভাষাকে ভারতীয় সংবিধান অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের নিস্পৃহতা লক্ষ্য করে এই অঞ্চলে গোর্খাল্যান্ড নামক একটি নতুন রাজ্য তৈরীর জন্য বিংশ শতাব্দীর আশির দশক জুড়ে ব্যাপক ও হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু হয়।১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ নামক একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদলের সৃষ্টি করা হয়, যাদের ওপর এই জেলার প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। ২০০৮-০৯ সাল নাগাদ ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পৃথক রাজ্যের দাবী মেনে নিতে অস্বীকৃত হলে পুনরায় ধর্মঘট আন্দোলন শুরু হয়।২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে একটি চুক্তির ফলে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামক একটি নতুন স্বায়ত্তশাসিত পার্বত্য পরিষদ গঠন করে এই জেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়।(তথ্যসূত্র:-উইকিপিডিয়া)।

আসুন ভ্রমনে গিয়ে যেখানে যেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকি।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

No comments:

Post a Comment